শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম॥ সুনামগঞ্জ জেলার অধিকাংশ সড়ক, সেতু, কালভার্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানের জলে, হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে রাস্তাঘাটসহ ঘরবাড়ির। গ্রামীণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটও ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। সড়কপথ বিচ্ছিন্ন থাকায় এখনো জেলা সদরের সঙ্গে কয়েকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে ধীরে ধীরে কমছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। সুনামগঞ্জ জেলায় গত ১৬ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সবক’টি উপজেলা প্লাবিত হয়। চোখের ফলকে বন্যার পানিতে ডুবে যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। জেলা শহরের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীণ সব সড়ক পানিতে তলিয়ে বানভাসি মানুষ আটকা পড়ে। উপজেলা থেকে জেলা শহরে আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। একপর্যায়ে বিভিন্ন বাহিনীর মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করে নেয়া হয় আশ্রয়কেন্দ্রে।
এখনো সেই ভয়াল রাতের বর্ণনা দিয়ে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বানভাসিরা। পানি ধীরে ধীরে কমছে, দৃশ্যমান হচ্ছে ভয়াল বন্যার ক্ষতচিহ্ন। ভয়াবহ ক্ষত নিয়ে আবার জেগে উঠছে সড়ক ও বাড়িঘর।
সরজমিন দেখা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়রাবাজার, জামালগঞ্জ ও শাল্লাসহ ৫টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক, সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর সড়ক, দিরাই-সুনামগঞ্জ সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়ক, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়ক স্থানে স্থানে ভেঙে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন।
তাহিরপুর সদর থেকে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের একমাত্র সড়ক যোগাযোগ মাধ্যম আনোয়ারপুর ব্রিজ সংলগ্ন সড়ক, সক্তিয়ারখলা সড়ক স্পট এখনো পানির নিচে। তাহিরপুরের মানুষ অনেক কষ্ট করে গত ১৮দিন ধরে নৌকাযোগে জেলা সদরে যাচ্ছেন। অপরদিকে তাহিরপুর সীমান্তের বিরেন্দ্রনগর থেকে চাঁনপুর পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলে সীমান্ত সড়কটি ভেঙে পড়েছে। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় ১৮৪ কি.মি. সড়ক এবং ২৫টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যায় ২ হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ১৩০টি কালভার্ট সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদ নির্মিত পাকা ও মাটির রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জানিয়েছেন, জেলায় তিলে তিলে গড়ে ওঠা গ্রামীণ অবকাঠামোর অধিকাংশই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার সব রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ব্রিজ, কালভার্ট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জেলার দুই হাজার কিলোমিটার সড়ক এবং ১২০টি ব্রিজ কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।